শতবর্ষী কলেজে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবী- ফেনী কলেজ সংসদ নির্বাচন (ফেকসু)
ফাতিমা আইমান রুহী, শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ফেনী সরকারি কলেজ।
ফেনী সরকারি কলেজ একটি শতবর্ষী প্রতিষ্ঠান। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে থাকা এই কলেজের রয়েছে অনেক গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য।তবে, দীর্ঘদিন ধরে এই কলেজে ছাত্র সংসদ (ফেকসু) কার্যকর হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য দাবী-দাওয়া জানানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অথচ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ সক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে।
শতবর্ষী এই কলেজে আরো নানারকম সমস্যা বিদ্যমান। ফলে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি, যেমন শতবর্ষী কলেজ হওয়া সত্বেও আজও নেই কোনো পরিবহন ব্যবস্থা, ক্লাসরুম সংকট, লাইব্রেরি ও ল্যাবের অভাব, শিক্ষার্থীদের পড়ার নেই কোনো অনুকূল পরিবেশ। অনার্স লেভেলে ঠিকঠাক মতো ক্লাস না হওয়া। ছাত্রী হলের আশেপাশেসহ পুরো ক্যাম্পাসে নেই কোনো ক্যান্টিন। নির্দিষ্ট সময়ের বাহিরে রাজনৈতিক দলগুলোসহ বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ, নিরাপত্তাহীনতা এমনকি শতবর্ষপূর্তীতে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো অর্থবহ আয়োজন না হওয়া, এগুলো শিক্ষার্থীদের হতাশা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে —এসব বিষয়ে কেউ কার্যকরভাবে কথা বলে না । ফেকসু থাকলে এসব সমস্যা সংগঠিতভাবে তুলে ধরা এবং সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যেতো।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা করার কারণে সেশনজট আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। পরীক্ষার বিলম্ব ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রতিটি ব্যাচ সময়মতো পড়াশোনা শেষ করতে পারছে না। এতে আমাদের উচ্চশিক্ষা ও কর্মজীবনের প্রস্তুতিতে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ফেকসু থাকলে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চাপ দেওয়ার মতো শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি হতো।
কিছু শিক্ষক ফেকসুর পক্ষে থাকলেও অনেকেই আপত্তি জানান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ—আসলে তারা আশঙ্কা করছেন ফেকসু গঠনের মাধ্যমে তাদের অনধিকার চর্চা বন্ধ হয়ে যাবে । এতে বোঝা যায়, ফেকসু চালুর বিষয়টি কেবল শিক্ষার্থীদের নয়, বরং কিছু প্রভাবশালী মহলের স্বার্থের সাথেও জড়িত।
অন্যদিকে শোনা যাচ্ছে, একটা মহল ফেকসু নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের পরে করার প্রস্তাবনা করতে চাচ্ছে। এটা নিছক ফেকসুকে বানচাল করার চেষ্টা মাত্র। এতে নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে পারে, কারণ তখন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলকে ব্যবহার করে ফেকসুর ওপর প্রভাব বিস্তার করার আশঙ্কা থাকবে। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব হারাতে পারে।
আমাদের কলেজে ফেকসুর কোনো ঐতিহ্য নেই, কিন্তু দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ সক্রিয়ভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধ, সেশনজট নিরসন এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে ফেকসু আমাদের জন্যও সমানভাবে প্রয়োজন।
সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা— আমরা চাই,ফেকসু নির্বাচন যেন নিরপেক্ষভাবে এবং যথাসময়ে হয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে যেনো শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। এতে আমরা আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ পাবো। আশা করছি ফেকসু গঠনের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা সীমিত হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপও ক্যাম্পাস বিনির্মানে নিবেদিত হবে। দুর্নীতি, সেশনজট এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে শক্তিশালী কণ্ঠ হিসেবে ফেকসু আমাদের পাশে দাঁড়াবে—এই আশায় আছি।
নোটেড
উত্তরমুছুন